যাত্রীসেবায় রেলওয়ের মনোযোগ দেওয়া জরুরি


হীরেন পণ্ডিত: রেল লোকসানে চলছে। প্রতিবছরই সেটি বাড়ছে। বিষয়টি অধিকাংশ রেল কর্মকর্তা ‘সেবা-নিরাপত্তা’ না বাড়ার অজুহাত হিসাবে দেখছেন। ‘আধুনিক’ কোচ-ইঞ্জিন রেলবহরে যুক্ত হলেও গতি বাড়ছে না। অথচ, গত এক যুগে রেলে প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। চলমান রয়েছে প্রায় পৌনে ২ লাখ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প। যেসব ট্রেন চলছে, সেগুলোর অধিকাংশই নির্ধারিত কোচের অর্ধেক নিয়ে চলাচল করছে। এতে যাত্রী দুর্ভোগের সঙ্গে ঝুঁকিও বাড়ছে। জরাজীর্ণ রেলপথ আর চরম ঝুঁকিতে থাকা লেভেলক্রসিং প্রতিনিয়তই প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। যাত্রীসেবা বৃদ্ধি, শিডিউল মেনে ট্রেন চালানো, টিকিট কালোবাজারি বন্ধসহ নানা প্রতিশ্রæতি শুনতে শুনতে আমরা অস্থির। রেলপথ সংস্কার, অবৈধ লেভেলক্রসিং বন্ধ, ট্রেনের গতি বাড়ানোর সঙ্গে যাত্রীসেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নানা আঙ্গিকে আলোচনা হয়। এরপরও যেমন চলার, চলে তেমনই। যেই লাউ সেই কদু।
রেলওয়ে অপারেশন, ট্রাফিক ও মেকানিক্যাল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বর্তমান সরকার গত একযুগে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করাসহ ১০৪টি স্টেশন, ৫২০টি যাত্রীবাহী কোচ, ৭৪টি ইঞ্জিন, ৫১৬টি ওয়াগন ক্রয়সহ ১৫০টি নতুন ট্রেন চালু করেছে। ব্যাপক উন্নয়ন হলেও গতি উঠানো যাচ্ছে না কোনো ট্রেনেরই। গড়ে ৬৭ কিলোমিটার গতি নিয়ে ট্রেন চলছে। অথচ, নতুন কোচ নিয়ে বর্তমানে ৩৬৬টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে। ৫০টি মালবাহী ট্রেন চলছে। ইঞ্জিন ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার গতি নিয়ে চলার কথা। রেলে বর্তমানে ৪৮৪টির মত স্টেশন চালু রয়েছে। প্রায় সব স্টেশনই উন্মুক্ত। বিমানবন্দর, কমলাপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহীসহ মাত্র ৭টি স্টেশন নিরাপত্তায় বেষ্টনি ঘেরা। প্রায় সবকটি স্টেশন অপরিষ্কারই থাকে বলা যায়। স্টেশনে হকার সমস্যা দিনে দিনে বেড়েই চলছে। কোথাও প্ল্যাটফরমের ওপর ফলমূল বিক্রি করছে। হাতে তৈরি খাদ্যসামগ্রী স্টেশন এবং ট্রেনে বিক্রি হচ্ছে। হকারদের একাংশের দাবি, তারা রেলওয়ে সংশ্লিষ্টদের ‘চাঁদা’ দিয়েই ব্যবসা করেন। কেন স্টেশন ও ট্রেনগুলো হকারমুক্ত করা যায় না এমন প্রশ্নে সংশ্লিষ্ট রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলেনবহু মানুষের রুটি-রুজি জড়িত। তাই রেল কর্তৃপক্ষ হয়তো বা ইচ্ছা করেই না দেখার ভান করে।
টিকিটধারী যাত্রীদের ভাষ্য, এক একটি ট্রেনে সিটের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ যাত্রী চলাচল করেন। রেলওয়ের হিসাব অনুযায়ী গড়ে ৭৯ শতাংশ টিকিট বিক্রি হলেও, যাত্রী চলাচল করে আসন সংখ্যার দ্বিগুণেরও বেশি। ফলে টিকিটধারী যাত্রীরা বিনা টিকিটিদের ভিড়ে পড়ে নাজেহালসহ চরম দুর্ভোগে পড়েন। ট্রেনের গার্ড অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা দাবি করেন ট্রেনে বিনা টিকিটিদের দৌরাত্ম্যই সবচেয়ে বেশি। এদের ভয়ে রেলসংশ্লিষ্টরা নিশ্চুপ থাকেন বলে শোনা যায়। যাত্রীসেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে রেলসংশ্লিষ্টদের ভূমিকা নেই বললেই চলে।
রেলপথ ও সেতু যথাযথ সংস্কার করা হয় না। অবৈধ লেভেলক্রসিংগুলো বন্ধ কিংবা নিরাপত্তাকর্মী, গেট স্থাপন নিশ্চিত করা হয় না। অপারেশন ও ট্রাফিক বিভাগ চরম ঝুঁকি নিয়েই ট্রেন চালাচ্ছে বছরের পর বছর। রেল কিংবা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অধিকাংশ নতুন প্রকল্প গ্রহণ-বাস্তবায়নে ব্যস্ত। লাইন সংস্কার, বন্ধ স্টেশন ও ট্রেন চালুর বিষয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই।
এক সময় ছিলো ছাত্ররা বা আমরাও শৈশবে কোথাও ভ্রমণ করলে জার্নি বাই ট্রেন নিয়ে রচনা লিখে ফেলতাম। অনেকের জন্য ট্রেন জার্নিই সবচেয়ে সুবিধা। ট্রেনে উঠে বসতে পারলে নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছা যায়। যেখানে ঢাকার এয়ারপোর্ট থেকে মতিঝিল যেতে জ্যাম ঠেলে তিন ঘন্টার মত গড়ে লাগে। সেখানে ট্রেনে ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু দিয়ে সিরজগঞ্জ বা এরকম দূরত্বের জায়গাগুলোতে চলে যাওয়া যায় অনায়াসে। বলছিলাম ট্রেনে উঠে বসতে পারলে কারণ এটা খুবই পীড়াদায়ক সড়ক পথে যে ঘন্টার পর ঘন্টা ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকতে হয়, এখানে এই সমস্যাটা কম। বিশ্ব এখন এগিয়ে গেছে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতেও রেলে সব জায়গায় ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই দুই তিন ঘন্টার দূরত্ব থেকে গিয়ে প্রতিদিন অফিস করার সুযোগ আছে আমাদের এই সংস্কৃতিটা কেনো যে তৈরি হয়নি এটিই ভাবনার একটি বড় বিষয়। বাংলাদেশ কত এগিয়ে গেছে। আমাদের প্রকৌশলীরা নষ্ট ডেমু ট্রেন নিজস্ব প্রযুক্তি দিয়ে আবার চালু করেছেন বিষয়টি খুব আশা জাগায়।
বাংলাদেশ এখন সব কিছুতেই ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু করছে। অথচ আমাদের এখনও যুদ্ধ করতে হয় ট্রেনটা ঠিক কোথায় দাঁড়াবে, কোন বগি কোথায় থাকবে এটা নিয়ে। কেন রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা নির্ধারণ করতে পারেন না এই বিষয়টা, আমাদের বুঝতে ও মেনে নিতে কষ্ট হয়। এমন কি ট্রেনের বগিতে উপরে চোখে পড়বে এমন জায়গায় বগির নম্বর গুলো লেখা থাকে না থাকলেও অস্পষ্ট। যার ফলে অসম্ভব রকমের জটলা, ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। দৌড়াদৌড়ি, হুড়োহুড়ি করে এক উদ্ভট পরিস্থিতি দেখা দেয়। এই ফাঁকে অসৎ লোকজন তাদের কুমতলব চরিতার্থ করে। এরপর টিকেট কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য তো আছেই। একশত টাকার টিকেট তিনশত টাকা এমন হচ্ছে সবসময়ই। কিন্তু আর কতদিন চলবে এসব। কবে ঠিক হবে এসব? বাংলাদেশ রেলওয়ে কি চাইলে সমাধান করতে পারে না? অবশ্যই পারে। তাই যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে হলে এ সব বিষয়ে জরুরি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
টিকিটধারীদের সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বিনা টিকিটি বন্ধে কঠোর হতে হবে। টিকিট কালোবাজারি বন্ধে সংশ্লিষ্ট রেলওয়ে কর্মকর্তা, টিকিট বিক্রয় প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। এছাড়া জরাজীর্ণ লাইন সংস্কার করতে হবে। অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে ট্রেনের ঝাঁকুনিতে। সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে যাত্রী এবং মানুষের সহযোগিতাও প্রয়োজন। বিনা টিকিটি রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। মানুষ যেন টিকিট কেটে ট্রেনে উঠেন সেটি যাত্রীদেরও দায়িত্ব। এছাড়া লেভেলক্রসিংগুলোতে দুর্ঘটনা ঘটছে। রেলপথ সংস্কার, স্টেশন ও ট্রেন পরিষ্কার রাখতে দায়িতরত্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।
জর্জ স্টিফেনসন রেলগাড়ির চিন্তা করেছিলেন মাত্র দুই শতক আগে। তিনি যদি দুই শতক পরের বাংলাদেশ রেলওয়ের ব্যবস্থাপনা কর্মকাণ্ড একদিন নিজ চক্ষে দেখতেন, তাহলে তিনি নিশ্চয়ই বাষ্পচালিত কিংবা ডিজেলচালিত ওই যানটি আবিষ্কারের কথা হয়তো বা কোনো দিন চিন্তাই করতেন না।
অভিযোগ আছে যে যাঁরা নির্ধারিত মূল্যে টিকিট কেটেছেন, তাঁদের প্রতি সুদৃষ্টি নেই ট্রেনের ভেতরের যেসব চেকার, টিটি, অ্যাটেনডেন্টস, এমনকি রেলওয়ে পুলিশদের। তাদের লক্ষ্য, যারা টিকিট না কেটে ট্রেনে উঠে অনেক সময় তাদের প্রতি। পৃথিবীর সর্বত্র সবচেয়ে কম ভাড়ায়, ট্রেনে চলাচল করে থাকে হাজার, লাখো মানুষ, বিশেষত ইউরোপ, আমেরিকায় যেসব পর্যটক ইউরোপের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ভ্রমণে যান, তাঁরা সবাই রাতের ট্রেনটিকেই বেছে নেন। নেওয়ার কারণও স্পষ্ট, হোটেলে ভাড়া না দিয়ে, ট্রেনের ভেতরেই রাত কাটিয়ে, ঠিক পরের দিন গন্তব্যস্থলে গিয়ে পৌঁছাতে পারলেন নির্দিষ্ট সময়ে, রাস্তায় থামাথামি নেই, চেইন টানা নেই, এমনকি মশা-মাছি, কলা, বাদামের খোসা চোখে না পড়লেও দু-একটি বিয়ার অথবা অন্য কোনো পানীয়ের বোতলও চোখে পড়বে না। কারণ নির্দিষ্ট জায়গা আছে ফেলে দেওয়ার। আমাদের কোনো ট্রেনের ভেতরে ওই ধরনের ব্যবস্থা আছে কিনা জানানেই তবে এ বিষয়ে ভাবতে হবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে।
১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে জাতির জনক তাঁর বিভিন্ন বক্তৃতায় যমুনা নদীর ওপর সেতু হবে উল্লেখ করেছিলেন। তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মুনসুর আলীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, যেন অচিরেই জাপান বা অন্য কোনো দেশের অর্থায়নে সেতুটি নির্মিত হতে পারে। ১৯৭২ এবং ১৯৭৩-৭৪ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশকে অর্থ দিয়ে যেভাবে সাহায্য করেছিল, সেই অর্থেই দেশের রেলওয়ে ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো। কিন্তু দাতাগোষ্ঠী রাস্তাঘাট উন্নয়নের কথা বললেও বলেনি রেলের সম্প্রসারণের কথা। উপরন্তু সমগ্র বাংলাদেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। যে পরিমাণ অর্থ এসেছিল দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে, সেই অর্থ দিয়েই দেশটাকে সম্পূর্ণভাবে গড়ে তোলা যেত, কারো কাছে হাত পাততে হতো না। ভৈরবে মেঘনা ব্রিজ এবং পাকশীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজের গার্ডারগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। সেই গার্ডারগুলো মেরামত করে রেলওয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াতের সুব্যবস্থা করা হয়েছিল। অন্যদিকে খুলনা থেকে রাজশাহী-সিরাজগঞ্জের যাত্রীদের চলাচলের জন্য হার্ডিঞ্জ ব্রিজটিও মেরামত করা হয়েছিল দ্রæততার সঙ্গে, অথচ দ্রæততার সঙ্গে পাবনা-নগরবাড়ী রেলপথ এখন অবধি হয়নি, জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল ১৯৭৩-৭৪ সালে।
আমাদের পাশ^বর্তী দেশ সমগ্র ভারতের রেলের সুব্যবস্থার কথা আমরা সবাই জানি। দুই একবার ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও অনেকের রয়েছে আমাদের রেলকর্মকর্তারা একটু অভিজ্ঞতা নিতে পারেন তাদের রেল ব্যবস্থাপনাও অনেক ভালো, শ্রীলংকার রেল ব্যবস্থা অত্যন্ত চমৎকার। ভারতের সাবেক রেলমন্ত্রী হয়ে লালু প্রসাদ যাদব যখন এলেন, তখন তিনি ভাড়া কমিয়ে দিয়ে রেলের আয় বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। সাংবাদিকরা লালু প্রসাদের কাছ থেকে জানতে চেয়েছিলেন, কী করে সম্ভব হলো? জনাব লালু প্রসাদ উত্তর দিয়েছিলেন, প্রত্যেক যাত্রী যদি ট্রেনের টিকিট কেটে ভ্রমণ করেন তাহলে লাভ হবেই হবে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেলওয়ের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মকাÐ নিজ চক্ষে দেখতে পারবেন কোনদিন যদি ভ্রমণ করেন।
অপরিষ্কার ট্রেনে বাথরুমের অবস্থা শোচনীয়। সব কম্পার্টমেন্ট ভর্তি হাজার হাজার মশা। আমরা বিভিন্ন আমলে বিভিন্ন প্রতিশ্রæতি পেয়ে ক্লান্ত। মাত্র চর ঘণ্টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছে দেবার প্রতিশ্রæতি আমরা পেয়েছি। এরপর বুলেট ট্রেন, আন্ডারগ্রাউন্ড কমিউটার আরো কত কি!
রেলের ক্যাটারিং অত্যন্ত নিম্নমানের এবং অপরিচ্ছন্ন, আবার দামও বেশি। এখানেও আধুনিক চিন্তা প্রয়োজন। প্রয়োজন পানীয় জল নিয়ে ভাবা। দূরপাল্লার রেল ভ্রমণে যাত্রীরা দাম দিয়ে কেনে বোতলজাত পানি। যাত্রীভাড়া যথাসম্ভব কম রেখে রেল পরিষেবাকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের নিতান্ত সাধারণ মানুষেরও নাগালের মধ্যে এনে দেওয়া। নতুন রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা ভালো; কিন্তু দিনের শেষে সাধারণ মানুষের কাছে ভুল বার্তাই পৌঁছে যাচ্ছে কিনা তা ভাবতে হবে। মেট্রোরেল, সার্কুলার রেল, এক্সপ্রেসওয়ে, আন্তঃদেশীয় রেলসংযোগ, দেশের সব জেলাকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কে অন্তর্ভুক্ত করা ।
রেলকে সেবামূলক খাত বলা হলেও সেবা বাড়েনি। বরং ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়, জনবল সংকট, বারবার রেল দুর্ঘটনা, টিকিট কালোবাজারি, প্রকল্পে ধীরগতি এবং নানা ধরনের দুর্নীতি, রেলের বগি অপরিষ্কার, বাথরুমে পানি-আলো না থাকা, ট্রেনের সিট ভাঙা, বিনা টিকিটের যাত্রীদের দৌরাত্ম্য ইত্যাদি কারণে কাক্সিক্ষত সেবার মান বাড়ছে না। রেলে গত কয়েক বছরে যে পরিমাণ বিনিয়োগ ও প্রকল্প নেয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়নের মতো দক্ষ কর্মকর্তার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ, দক্ষ জনশক্তি তৈরি ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ওপরই রেলকে সর্বোচ্চ জোর দিতে হবে।
ভারতে শুরু থেকে রেল ব্যবস্থাকে যতখানি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে এটি গড়ে তোলা হয়েছে, বাংলাদেশ তা করেনি। এটা বুঝতে হবে সড়কের ওপর চাপ কমানোর কোনো বিকল্প নেই। সেটা যদি করতেই হয় তাহলে রেলের পরিধি বৃদ্ধি ও ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে। চাহিদা অনুযায়ী রেল ব্যবসায়
এ অবস্থার উত্তরণে রেলওয়ের উচিত যাত্রীসেবার মান বাড়ানোর বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেয়া। রেল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে সবার আগে। সরকারকে খুঁজে দেখতে হবে তারা কী লক্ষ্য অর্জনে রেলে বিপুল বিনিয়োগ করেছে। সেই লক্ষ্য কি অর্জিত হয়েছে? হলে কতটা তাও মূল্যায়ন করতে হবে।

হীরেন পণ্ডিত, প্রাবন্ধিক ও গবেষক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *