আয়ে শীর্ষে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’, যাত্রী পরিবহনে ‘পারাবত’

বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে আন্তনগর ট্রেনগুলোতে যাত্রী পরিবহন কমেছে। আগের বছরের (২০২৩) তুলনায় বিদায়ী বছরে যাত্রী কমেছে ১৪ লাখ ২০ হাজার ২৪৮ জন। তবে যাত্রী কমলেও নতুন ট্রেন চালুর কারণে রেলের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের চেয়ে এ বছরের ১১ মাসে ৩০ কোটি ৫০ লাখ টাকা বেশি আয় করেছে রেল।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের আন্তনগর ট্রেনগুলোর আয় ও যাত্রী পরিবহনের হিসাব পর্যালোচনা করে এই তথ্য পাওয়া গেছে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে ২৭ জোড়া আন্তনগর ট্রেন নিয়মিত চলাচল করে। এ ছাড়া পূর্বাঞ্চল থেকে পশ্চিমাঞ্চলে ট্রেন চলাচল করে ১৮টি। এসব ট্রেনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যাত্রী পরিবহন করেছে ঢাকা-সিলেট রুটে চলাচলরত পারাবত এক্সপ্রেস। আর আয়ের দিকে শীর্ষে ছিল নতুন চালু হওয়া কক্সবাজার এক্সপ্রেস। এই ট্রেন ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বিরতিহীন চলাচল করে।

ট্রেন পরিচালনার সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে দুটি অঞ্চলে বিভক্ত। একটি অঞ্চল যমুনা নদীর পূর্ব পাশে, যা পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে (ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট-ময়মনসিংহ বিভাগ) হিসেবে পরিচিত। আর যমুনা নদীর পশ্চিম পাশ নিয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে গঠিত (রাজশাহী-রংপুর-খুলনা বিভাগ)।

রেলওয়ের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত (ডিসেম্বরের হিসাব এখনো চূড়ান্ত হয়নি) ৭২টি ট্রেনে যাত্রী চলাচল করেছেন ১ কোটি ৭৯ লাখ ১৬ হাজার ১৬০ জন। আগের বছর ২০২৩ সালে এই সময়ে যাত্রী পরিবহন করা হয়েছিল ১ কোটি ৯৩ লাখ ৩৬ হাজার ৮০৪ জন। এদিকে এ বছর এসব ট্রেন থেকে রেলের আয় হয়েছে ৬৪২ কোটি ১৭ লাখ ৯১ হাজার ৪৬৭ টাকা। ২০২৩ সালের আয়ের পরিমাণ ছিল ৬১১ কোটি ৬১ লাখ ১৭ হাজার ৮৭০ টাকা।

আয় বৃদ্ধির বিষয়ে রেলওয়ের বিভাগীয় রেল ব্যবস্থাপক (চট্টগ্রাম) এ বি এম কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, আয় বৃদ্ধির অন্যতম ও মূল কারণ হচ্ছে কক্সবাজার রুট চালু হওয়া। এটি দীর্ঘ রুট। আবার ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেনে যাত্রীদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কক্সবাজার রুটের ট্রেনগুলো চালু হওয়ার কারণে রেলের আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রভাব রেখেছে।

যাত্রী কমে যাওয়ার বিষয়ে এ বি এম কামরুজ্জামান বলেন, গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় ট্রেন চলাচল সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ ছিল। ট্রেন বন্ধ থাকার কারণে যাত্রী পরিবহনও করা সম্ভব হয়নি।

সর্বোচ্চ যাত্রী পরিবহন পারাবত এক্সপ্রেসের

রেলের পূর্বাঞ্চলে নিয়মিত ২৭ জোড়া আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে। ট্রেনগুলো সর্বোচ্চ ৯ লাখ থেকে সর্বনিম্ন ৩ লাখ যাত্রী পরিবহন করেছে। এর মধ্যে ৫ লাখের বেশি যাত্রী আসা-যাওয়া করেছেন ১২ জোড়া ট্রেনে।

২৭ জোড়া ট্রেনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যাত্রী পরিবহন করেছে পারাবত এক্সপ্রেস। এটি ঢাকা-সিলেট রুটে চলাচল করে। জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এই ট্রেনে যাতায়াত করেছেন ৯ লাখ ৯ হাজার ৫৪১ যাত্রী। যাত্রী পরিবহনে এই ট্রেন থেকে রেলের আয় হয়েছে ১৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

এরপর সর্বোচ্চ যাত্রী পরিবহন করা চারটি ট্রেনই চলাচল করে চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলরত মহানগর গোধূলি-প্রভাতি যাত্রী পরিবহন করেছে ৮ লাখ ২৭ হাজার ৪৩৬ জন। এই ট্রেনে রেলের আয় হয়েছে ২৫ কোটি ৪৬ লাখ ৮২ হাজার ৫৪৮ টাকা।

ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলরত আরেকটি ট্রেন মহানগর এক্সপ্রেসে চলাচল করেছেন ৭ লাখ ১০ হাজার যাত্রী। রেলের আয় হয় ১৯ কোটি ৯৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।

চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে চলাচলরত দুটি আন্তনগর ট্রেনের মধ্যে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস বেশি যাত্রী পরিবহন করেছে। এই ট্রেনে চড়েছেন ৬ লাখ ৭২ হাজার ৯৫১ জন। আর উদয়ন এক্সপ্রেস করে আসা-যাওয়া করেছেন ৪ লাখ ৯১ হাজার জন। দুটি ট্রেন থেকে আয় হয়েছে যথাক্রমে ১৮ কোটি ৫১ লাখ ৭১ হাজার ও ১৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

পাঁচ লাখের বেশি যাত্রী আনা-নেওয়া করা অন্য ট্রেনগুলো হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের চট্টলা এক্সপ্রেস, চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটের মেঘনা এক্সপ্রেস, ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ বাজার রুটের তিস্তা এক্সপ্রেস ও ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস, ঢাকা-সিলেট রুটের জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটের তূর্ণা এক্সপ্রেস এবং ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটে চলাচলরত এগারো সিন্ধুর প্রভাতি।

প্রথম বছরেই আয়ের শীর্ষে কক্সবাজার এক্সপ্রেস

প্রায় ছয় বছর কাজ চলার পর ২০২৩ সালের নভেম্বরে উদ্বোধন করা হয় রেলওয়ের নতুন রুট কক্সবাজার। চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইনের উদ্বোধন করা হয়। এর মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রামের সঙ্গে পর্যটন শহরের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয় ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে। ঢাকা থেকে আন্তনগর বিরতিহীন ট্রেন দেওয়া হয়। কক্সবাজার এক্সপ্রেস নামের এই ট্রেন চলাচল শুরুর পর থেকেই দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পরের বছর জানুয়ারি থেকে আরেকটি বিরতিহীন ট্রেন দেওয়া হয় ঢাকা থেকে। চট্টগ্রাম থেকে চালু করা হয় বিশেষ ট্রেন।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে চলাচলরত আন্তনগর ট্রেনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় হয়েছে কক্সবাজার এক্সপ্রেস থেকে। চলাচলের প্রথম বছরেই এই ট্রেন ৪ লাখ ৮২ হাজার ২২৬ জন যাত্রী পরিবহন করে। আয় হয়েছে ৪২ কোটি ৯৫ হাজার টাকা, যা আন্তনগর ট্রেনগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। কক্সবাজার রুটে আরেকটি ট্রেন পর্যটক এক্সপ্রেস থেকে আয় হয়েছে ৩৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এই ট্রেনে যাওয়া-আসা করেছেন ৪ লাখ ৬ হাজার যাত্রী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *