ই-স্বাস্থ্যসেবা আনতে পারে শিল্পবিপ্লব

ই-স্বাস্থ্যসেবার মূল লক্ষ্য হচ্ছে টেলিফোন বা মোবাইলের মাধ্যমে দূরবর্তী রোগীকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছ থেকে অতিদ্রুত চিকিৎসসেবার ব্যবস্থা করা। ঘরে বসেই টেলি-কনফারেন্স বা ভিডিও-কনফারেন্স কিংবা অনলাইনের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা যায়। সকল প্রকার স্বাস্থ্যসেবা সাধারণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া, চিকিৎসা-বিষয়ক সুপরামর্শ প্রদান করা, বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্টের ব্যবস্থা করে দেওয়া, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা, দুর্লভ ওষুধগুলোর সহজ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করা।

আপনি ব্যবহার করছেন স্মার্ট রিস্ট ব্র্যান্ড। যা বলে দিচ্ছে আপনার পালস রেট, হার্টবিট, স্ট্রেস লেভেল, কত সময় হাঁটলেন, মাপছে আপনার ওজন। এসবই কিন্তু আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংস) ডিভাইসের অবদান। আইওটি ডিভাইস দূরবর্তী অবস্থান থেকে স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ এবং জরুরি নোটিশ সিস্টেম সক্রিয় করতেও ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য খাতে অনেক অগ্রগতি করেছে, যেমন ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুহার কমানো, এইচআইভি ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর ওষুধের প্রাপ্যতা, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের যক্ষ্মা শনাক্তকরণ ও সরাসরি তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে যক্ষ্মা নিরাময়ের হার বৃদ্ধি। এ ছাড়া দারিদ্র্য হার হ্রাস, কম ওজনের শিশুদের সংখ্যা কমানো, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি, নবজাতক ও মাতৃ-মৃত্যুহার কমানো, টিকাদান কর্মসূচির উন্নয়ন এবং সংক্রামক ব্যাধির প্রকোপ কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে।
ঝামেলা ছাড়াই স্বাস্থ্যসেবা অ্যাপসে মিলছে অনলাইনে ডাক্তারের ভিডিও পরামর্শ, ই-প্রেসক্রিপশন ও জরুরি স্বাস্থ্যসেবা। আপনার স্মার্টফোনে স্বাস্থ্যসেবা অ্যাপসটি ইনস্টল করে নিতে পারেন খুব সহজে। আর সরাসরি ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন ভিডিও কলে। স্বাস্থ্যসেবা অ্যাপস থেকে সহজে ডাক্তারের সিরিয়াল নিতে তা চালু করে হোমপেজের ডাক্তার অপশনে ক্লিক করে নেওয়া যায় স্বাস্থ্যসেবা। যে সমস্যার জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাবেন সেই ক্যাটাগরি ক্লিক করুন। এবার পছন্দের ডাক্তারের উপর ক্লিক করুন তারপর ‘আপনার অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করুন’ বাটনে ক্লিক করুন, এবার চেম্বার নির্বাচন করুন, প্যাশেন্ট টাইপ নির্বাচন করুন, যে তারিখে দেখাবেন নির্বাচন করুন, এবং কোন সময়ে ডাক্তারের দেখাবেন সেটা নির্বাচন করুন, আপনার সমস্যা লিখে অ্যাপয়েন্টমেন্ট সাবমিট করুন। ডাক্তারের ফি নির্ধারিত থাকলে ফি প্রদান পেজে নিয়ে যাবে এবং কীভাবে ফি পরিশোধ করবেন সেটা নির্বাচন করে তা পরিশোধ করলে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিশ্চিত হয়ে যাবে। খুব সহজে হয়ে গেল ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট।

বিশ্ব সভ্যতাকে নতুন মাত্রা দিচ্ছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব। এই বিপ্লবের প্রক্রিয়া ও সম্ভাব্যতা নিয়ে ইতোমধ্যে বিশ্ব ব্যাপী ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। আলোচনা হচ্ছে আমাদের দেশেও। এই আলোচনার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে এক ধরনের সচেতনতা তৈরি বাংলাদেশকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের নেতৃত্ব দানের উপযোগী করে গড়ে তুলে দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছেন সবাই। আমরা জানি, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব হচ্ছে- ফিউশন অব ফিজিক্যাল, ডিজিটাল এবং বায়োলজিক্যাল স্ফেয়ার। এখানে ফিজিক্যাল হচ্ছে হিউম্যান, বায়োলজিক্যাল হচ্ছে প্রকৃতি এবং ডিজিটাল হচ্ছে টেকনোলজি। এই তিনটিকে আলাদা করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে কী হচ্ছে? সমাজে কী ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে? এর ফলে ইন্টেলেকচুয়ালাইজেশন হচ্ছে, হিউমেন মেশিন ইন্টারফেস হচ্ছে এবং রিয়েলটি এবং ভার্চুয়ালিটি এক হয়ে যাচ্ছে।

আমাদের চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করতে হলে ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্সি, ফিজিক্যাল ইন্টেলিজেন্সি, সোশ্যাল ইন্টেলিজেন্স, কনটেস্ট ইন্টেলিজেন্সের মতো বিষয়গুলো তাদের মাথায় প্রবেশ করিয়ে দিতে হবে। তাহলে ভবিষ্যতে সবাইকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য প্রস্তুত করতে পারব। তবে ভবিষ্যতে কী কী কাজ তৈরি হবে সেটা অজানা। এই অজানা ভবিষ্যতের জন্য প্রজন্মকে তৈরি করতে আমরা আমাদের কয়েকটা বিষয়ে কাজ পারি। সভ্যতা পরিবর্তনের শক্তিশালী উপাদান হলো তথ্য। সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ তার অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে উদগ্রীব ছিল। কাগজ ও কালির আবিষ্কার এবং পরবর্তীকালে ছাপাখানার উদ্ভব মানুষের তথ্য বিস্তারের আকাক্সক্ষাকে বাস্তবে রূপায়িত। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রযুক্তিগত আলোড়ন সর্বত্র বিরাজমান।

এ বিপ্লব চিন্তার জগতে, পণ্য উৎপাদনে ও সেবা প্রদানে বিশাল পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। মানুষের জীবনধারা ও পৃথিবীর গতি-প্রকৃতি ব্যাপকভাবে বদলে দিচ্ছে। জৈবিক, পার্থিব ও ডিজিটাল জগতের মধ্যেকার পার্থক্যের দেয়ালে চিড় ধরিয়েছে। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবটিক্স, ইন্টারনেট অব থিংস, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, থ্রিডি প্রিন্টিং, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও অন্যান্য প্রযুক্তি মিলেই এ বিপ্লব। এ বিপ্লবের ব্যাপকতা, প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিকতা ও এ সংশ্লিষ্ট জটিল ব্যবস্থা বিশ্বের সরকারগুলোর সক্ষমতাকে বড় ধরনের পরীক্ষার সম্মুখীনও করেছে। বিশেষত যখন তাবৎ সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা তথা এসডিজির আলোকে ‘কাউকে পিছিয়ে ফেলে না রেখে’ সবাইকে নিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। টেকসই উন্নয়ন, বৈষম্য হ্রাস, নিরাপদ কর্ম এবং দায়িত্বশীল ভোগ ও উৎপাদন এসডিজি বাস্তবায়ন ও অর্জনের মূল চ্যালেঞ্জ।

আমাদের দেশে এখন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নাগরিকগণ সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত চিকিৎসকের কাছ থেকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরামর্শ নিতে পারছেন। সেজন্য বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে একটি করে মোবাইল ফোন দেওয়া হয়েছে। আপনিও এই সেবা গ্রহণ করতে পারেন। এসব মোবাইল ফোনের নম্বর স্থানীয়পর্যায়ে প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টাব্যাপী কোনো না কোনো চিকিৎসক এই মোবাইল ফোনের কল রিসিভ করেন। স্থানীয় জনগণ এসব মোবাইলে ফোন করে হাসপাতালে না এসেই বিনামূল্যে চিকিৎসা পরামর্শ নিতে পারেন।
এই সেবা চালুর ফলে গ্রাম বা প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাসরত ধনী-গরিব সবার জন্যই বিনামূল্যে সরকারি চিকিৎসকদের কাছ থেকে চিকিৎসা পরামর্শ গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। নিঝুম রাতে, জরুরি প্রয়োজনে বা পথের দূরত্বের কারণে চিকিৎসা পরামর্শ পেতে আর দেরি করার প্রয়োজন নেই। হাতুড়ে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হয়ে ভুল বা অপচিকিৎসার ঝুঁকি নেওয়ারও প্রয়োজন নেই। যে চিকিৎসা বাড়িতে বসেই সম্ভব তার জন্য হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।

যে চিকিৎসা গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকেই সম্ভব তার জন্য উপজেলা বা জেলা হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আবার যে রোগটি জটিল এবং আশু চিকিৎসা প্রয়োজন তার জন্য অযথা এখানে সেখানে ঘোরাঘুরিতে সময় নষ্ট না করে বড় হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শটিও পাওয়া সম্ভব একটি মাত্র ফোন কল করেই। ব্যস্ত মানুষেরাও রোগের শুরুতেই পরামর্শ নিতে পারেন চিকিৎসকের। এর ফলে রোগ জটিল হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক কমে যায়।
দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর বহির্বিভাগে অনেক রোগী আসে। সীমিত জনবল এবং ওষুধপথ্য দিয়ে সব সময় মানসম্পন্ন সেবা প্রদানের কাজটি তাই কঠিনই বটে। মোবাইল ফোন স্বাস্থ্যসেবার ব্যাপক প্রচার হলে অনেক রোগী ঘরে বসেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। ফলে হাসপাতালগুলোর ওপর চাপ কমবে। তখন সীমিত জনবল ও সম্পদ দিয়েই আগত রোগীদের ভালো চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে। রোগীদের সন্তুষ্টিও বৃদ্ধি পাবে। মোবাইল ফোনে স্বাস্থ্যসেবা কমিউনিটি ক্লিনিকেও সম্প্রসারণ করা হবে।

দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের হাসপাতালে উন্নত মানের টেলিমেডিসিন সেবা চালু আছে। শিগগিরই যুক্ত হচ্ছে আরও কিছু হাসপাতাল এই সেবা চালুর ফলে উপজেলা ও জেলাপর্যায়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা আধুনিক মানের টেলিমেডিসিন পদ্ধতিতে বিশেষায়িত হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে পারছেন।

এ ছাড়া প্রতিটি উপজেলা হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ ও ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ওয়েব ক্যামেরা প্রদান করা হয়েছে। ফলে উপজেলাপর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি রোগীদের জন্য জেলা ও রাজধানীর বিশেষায়িত হাসপাতালসমূহে কর্মরত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ওয়েব ক্যামেরাযুক্ত মিনি ল্যাপটপ কম্পিউটার সরবরাহ করা শুরু হয়েছে। দেশের সব ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ সবগুলো কমিউনিটি ক্লিনিকে ল্যাপটপ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এসব মিনি ল্যাপটপে তারহীন ইন্টারনেট সংযোগ থাকছে। টেলিমেডিসিন সেবা প্রদানের কাজে ল্যাপটপগুলো ব্যবহার করা হয়। যেসব রোগীর চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন হবে, সেসব রোগীর জন্য ভিডিও কনফারেন্স চালু করে উপজেলা হাসপাতালের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এর ফলে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসকের অভাব পূরণ করছে। স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন, নিরাপদ পানি, সেনিটেশন, পুষ্টি ইত্যাদি সব বিষয়ে স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক বিভিন্ন তথ্যও সহজেই বিতরণ করা হচ্ছে। গ্রামীণ জনগণের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্যভাণ্ডারও আপডেট করা হচ্ছে এই ল্যাপটপ দিয়ে।

বাংলাদেশের প্রায় ৫ হাজার ইউনিয়নে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র পরিচালনা করে থাকে। এই কেন্দ্রগুলো স্থানীয় জনগণকে নামমাত্র চার্জে আইসিটি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে মানসম্মত সেবা দিয়ে থাকে। আইসিডিডিআর বিতে ‘কারা’ নামের টেলি-অফথালমোলজি প্রযুক্তি দিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি শনাক্তের একটি অত্যাধুনিক পদ্ধতি চালু আছে। ‘বন্ডস্টাইন’ টানা চার বছরের মতো সফলভাবে মেডিকেলের প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানোর জন্য আইওটি ডিভাইসের মাধ্যমে স্মার্ট ট্র্যাকিং ব্যবহার করে আসছে। অলীক, ইন্টেলিজেন্ট মেশিনস, দেশ এআই, ব্রেনস্টেশন ২৩-সহ আরও কিছু উদ্যোগ স্বল্প পরিসরে কাজ করছে আইওটি, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি আর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে।
বাংলাদেশের ই-স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে যাচাইযোগ্য জাতীয় পরিচয়পত্রের সম্ভাব্য ভূমিকা এর সফলতার অন্তরায় এবং তা থেকে উত্তরণের উপায় বের করতে হবে। ভারতের আধার প্রকল্প থেকে আমরা ধারণা নিতে পারি, যা বিশে^র সর্ববৃহৎ বায়োমেট্রিক আইডি সিস্টেম হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে এই আধার কার্ড। এতে একটি ইউনিক আইডেন্টিটি নাম্বার দেওয়া হয়, যার মাধ্যমে সকলকে দেওয়া হবে স্বাস্থ্যসেবা, পেনশন সেবা ও অন্যান্য অনেক সামাজিক সুবিধা। এই আইডেন্টিটিকে তুলনা করা যায় বাংলাদেশের ইউনিক জাতীয় পরিচয়পত্র সুবিধার সঙ্গে।

পরিচয়পত্র যাচাইযোগ্য করা সম্ভব হলে তা ই-স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের মূল উপাদান হয়ে উঠতে পারে। এই ইউনিক আইডেন্টিটির প্রযুক্তিগত দিক ও চ্যালেঞ্জসমূহ নিয়ে আমরা আমাদের প্রযুক্তিগত সিস্টেম কাজে লাগাতে পারি। এনআইডি ও অন্যান্য ডাটাবেজের ক্ষেত্রে অন্যতম উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে তথ্যের গোপনীয়তা। তবে এস্তোনিয়া, বাতসোয়ানা, থাইল্যান্ড ও কোরিয়ার ই-হেলথ সেবার সফলতার উদাহরণ আমাদের প্রেরণা হিসেবে কাজ করতে পারে।

ইউনিক আইডির অভাবে বিশে^র প্রায় ২ বিলিয়ন মানুষ অনেক প্রয়োজনীয় সামাজিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশ^ব্যাপী ইউনিক আইডেন্টিটির অত্যন্ত প্রয়োজন সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা গ্রহণ, লিঙ্গ-সমতা আনয়নের জন্য। কারণ, আইডেন্টিটি কার্ড নেই এমন মানুষের মধ্যে অধিকাংশ হচ্ছেন নারী। এতে তারা উন্নতি ও সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে। ইউনিক আইডেন্টিটি ব্যাবহারের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা কীভাবে দূর করা যায় তা ভাবতে হবে।

বাংলাদেশের বর্তমান স্বাস্থ্যসেবায় ইলেক্ট্রনিক ব্যবস্থাসমূহ ও তার অপ্রতুলতার কারণে ৬২% স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের মধ্যে ই-স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে জ্ঞান রয়েছে, তাদের মধ্যে এর প্রতি ইতিবাচক মনোভাব আছে ৫৯%-এর। স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে সাইবার-ক্রাইম প্রতিরোধে পর্যাপ্ত আইন নেই। আমাদের দেশেও প্রত্যেক রোগীর জন্য ইউনিক আইডেন্টিফায়ার নিয়ে কাজ করতে হবে। ডাটাবেজে তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে যাতে রোগীদের যে কোনো সময় যে কোনো কাজে প্রবেশাধিকারের সুযোগ থাকে। আবার ডাটাবেজ ও ইউনিক আইডেন্টিটি সিস্টেম থাকলেই হবে না ডাটাবেজ যাতে হ্যাকড না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি হয় নির্দিষ্টভাবে ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে। একে অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য করার দায় স্বাভাবিকভাবেই নিতে চান না নির্বাচন কমিশন। তাই এর বহু ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকারি নীতিমালা বা আইনের বিকল্প নেই। প্রযুক্তি গ্রহণে সেবা প্রদান ও গ্রহণকারীদের অনীহা রয়েছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডাটা সংরক্ষণের ব্যবস্থা আমলাতান্ত্রিক ও সময়সাপেক্ষ হওয়ায় সেবাপ্রদানকারীরা অনীহা প্রকাশ করেন। বর্তমানে ডাটাবেজে কোনো গোপনীয়তা লঙ্ঘনজনিত ইস্যু নেই। তবে এই আইডেন্টিটির নানা ইস্যু সমাধানের জন্য সরকারের অনেক সংস্থাকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে আর এর নির্দেশ আসতে হবে সরকারের সর্বোচ্চপর্যায় থেকে। ই-স্বাস্থ্যসেবায় যাচাইযোগ্য ইউনিক পরিচয়পত্র নিয়ে কাজ করতে সরকারি-বেসরকারি উভয়পর্যায়ের সম্মিলিত কার্যক্রম প্রয়োজন তাহলে ই-স্বাস্থ্যসেবা দ্রুত জনপ্রিয় হবে সবার মাঝে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *