সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে ব্যাহত সৃষ্টিশীলতা ও সামাজিক জীবন


হীরেন পণ্ডিত: পারস্পরিক যোগাযোগ বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ, তথ্য আদান-প্রদান এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খবরাখবর জানার জন্য চিঠি, সংবাদপত্র, রেডিও ও টেলিভিশনের ওপর নির্ভরতা বহুকাল থেকে চলে আসছিল। পরিবারের একে অন্যের খোঁজখবর চিঠির মাধ্যমে আমরা জানতে পারতাম। এই মাধ্যমে আমাদের ভাবের আদান-প্রদান হতো। মনের ভাব প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম ছিল চিঠি।: এক সময় দৈনিক পত্রিকা কিংবা সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনে মানুষ কবিতা, গল্প লিখতো। অনেকে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করত কখন তার লেখাটি প্রকাশিত হবে। পাঠকরাও অপেক্ষা করত পছন্দের লেখকের লেখা পড়ার জন্য। একটি চিঠি পাওয়ার জন্য আমাদের কতই না অপেক্ষা। চিঠির ভাষা, লয়, মাধুর্য আমাদের মুগ্ধ ও উদ্বেলিত করত। আমরা আকুল হয়ে অপেক্ষা করতাম কখন প্রিয়জনের চিঠি আসবে। চিঠির বিষয়ে খবর নিতাম। তেমনিভাবে সকালে ঘুম থেকে উঠে রেডিও চালু করতাম দেশ ও দেশের বাইরের খবরাখবর জানার জন্য।
বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত টেলিভিশনের সামনে থাকতাম বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখার জন্য। নাটক, সিনেমা, গানসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান পরিবারের সবার সাথে একসঙ্গে বসে উপভোগ করতাম। এতে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হতো। সকালবেলা পত্রিকা না পড়লে যেন সারা দিন ভালো কাটত না। কালের বিবর্তনে যোগাযোগের সনাতন কোনো মাধ্যমের প্রতি আমাদের আজ মুখ ফিরিয়ে নিতে হচ্ছে।
আমরা এখন আর চিঠি লিখি না বললেই চলে। রেডিও আমরা ক’জনই বা শুনি। সংবাদপত্র আমাদের সামনে টিকে আছে। অনলাইন পত্রিকার মাধ্যমে আমরা যখন যাবতীয় সংবাদ পাই, তখন কাগজে প্রকাশিত পত্রিকার প্রতি আমাদের আকর্ষণও আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা আজ ক্লাসে খাতা-কলম নিয়ে আসতে চায় না। মোবাইলে লিখে কিংবা ক্লাস লেকচার রেকর্ড করে পড়াশোনায় অভ্যস্ত হতে যাচ্ছে। প্রযুক্তির ওপর নির্ভরতা আমাদের হাতে লেখার অভ্যাসকে একেবারেই কমিয়ে দিচ্ছে।
আধুনিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের তথ্যের আদান-প্রদানকে সহজ করছে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। মুহূর্তের মধ্যে আমরা যে কারো সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারি। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যাবতীয় কাজ সম্পাদন জীবনকে করছে সহজ ও সাবলীল। আমাদের কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি করছে আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি। প্রযুক্তির সঠিক ও যুগসই ব্যবহার আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং আমরা আরো সামনের দিকে এগিয়ে যাব তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অযাচিত ব্যবহার ও বিকৃতি আমাদের অনেক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যোগাযোগের মাধ্যমগুলো যখন একটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পরিচালিত না হয়, তখন এর অপব্যবহার রূপান্তরিত হয়।
রেডিও, টেলিভিশন ও সংবাদপত্রের মতো মাধ্যমকে রাষ্ট্র ইচ্ছা করলেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। কিন্তু ফেসবুক, ইউটিউব, আইপি টিভি ও অন্য মাধ্যমগুলো আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। মোটাদাগে বললে এখন যোগাযোগ মাধ্যম, যাকে আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বলি, তা একেবারেই উন্মুক্ত। আমরা যোগাযোগের জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলে সময় পার করি। মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য আমরা ফেসবুক ব্যবহার করি। নিজে নিজে ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবে ছড়িয়ে দিই। যা ভালো লাগে তাই আমরা করতে পারি।
আধুনিক প্রযুক্তির প্রতি আসক্তি আমাদের কবিতা, গল্প ও উপন্যাস পড়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। গান শোনাকে আমাদের মাঝ থেকে বিদায় দিয়েছি। ফলে একটি সৃজনশীল ও সৃষ্টিশীল প্রজন্ম গড়ে উঠছে না। নতুন প্রজন্ম একটি ভোগবাদী প্রজন্মের দিকে ধাবিত হচ্ছে, যেখানে নিজেদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার উপযোগী করে তৈরি করাই বড় বিষয়। একটি উদার ও মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন মানুষ হয়ে আমরা নিজেদের গড়ে তুলছি না। অনেকের ঘরে বাবা, মা ছেলে, মেয়ে সবাই মোবাইল টিপে চলছি সর্বদা। আত্মীয়-স্বজনের সাথে কোন সম্পর্ক নেই, যোগাযোগ নেই, অসামজিক এক প্রাণীতে পরিণত হয়ে যাচ্ছি কিনা তা ভাবার সময় এসেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি বড় দিক বিকৃতি। বিকৃত তথ্য উপস্থাপন, অন্যের মতামতে অযাচিত হস্তক্ষেপ এবং কারণে-অকারণে নাক গলানো আমাদের দারুণভাবে পেয়ে বসছে। তথ্য ও ছবি বিকৃতি এবং বিকৃত ভিডিও প্রকাশ আমাদের কারো কারো ক্ষেত্রে মানসম্মানের হানি হয়ে দেখা দিচ্ছে। যোগাযোগ মাধ্যম এখন অনেকটা হাতের মুঠোয় এবং নাগালের মধ্যে। মুহূর্তের মধ্যে কোনো একটি খবর ভাইরাল হয়ে যায়। অনেক খবরে সত্যের লেশমাত্র থাকে না; কিন্তু ভাইরাল হয়ে যাওয়ার কারণে কারো কারো ক্ষতির কারণ হয়।
আমাদের কোমলমতি শিশু-কিশোরদের ওপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব অনেক বেশি। তাদের সামনে যখন কোনো বিকৃত তথ্য ও ছবি প্রকাশ পায়, তখন তারা বিভ্রান্ত হয় এবং ভুল পথে চলতে বাধ্য হয়। ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার একজন শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় শিক্ষার্থীরা শিক্ষণীয় দিককে উপেক্ষা করে ফেসবুকে চ্যাটিং ও ইউটিউবে ভিডিও দেখতেবেশি ব্যস্ত থাকে। ফলে তথ্য-প্রযুক্তির পরিপূর্ণ ব্যবহার থেকে তারা দূরে থাকছে।
এখনকার সময়ে বড়-ছোট সবাই আমরা সময় অতিবাহিত করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। কারো মতামতের ওপর নিজের মতামত লিখে নিজেকে প্রকাশ করতে চাই। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা যদি গঠনমূলক ও সৃজনশীল হতাম, তাহলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকেও অনেক কিছু শেখার ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেখার যে একেবারে কিছু নেই তা বলছি না, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় একে অন্যকে হেয় করা কিংবা অপমান করার ক্ষেত্রেও মাধ্যমগুলো ব্যবহার হচ্ছে। মাধ্যমগুলো হতে পারে একটি বড় শিক্ষণ মাধ্যম, যদি আমরা এগুলোকে নিজে এবং অন্যকে শেখানোর কাজে ব্যবহার করি। এর সঠিক ব্যবহার পারে একজন সৃষ্টিশীল মানুষ, একটি সৃষ্টিশীল পরিবার ও একটি উন্নত সমাজ উপহার দিতে। আসুন আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে বিকৃতি ও ভুল উপস্থাপনা থেকে দূরে রাখি। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজকে সুন্দরভাবে চলতে দিই। নিজেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিয়ন্ত্রকের বাহক হিসেবে কাজ করি এবং এর যথেচ্ছ ব্যবহার রোধ করি। সরাসরি কারো কোনো পোস্ট বা কনটেন্ট অপসারণের সুযোগ কোনো দেশের সরকার বা কর্তৃপক্ষের নেই। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে, আইন বা নিয়ম লঙ্ঘন করলে নির্দিষ্ট পোস্ট বা বিষয় অপসারণের জন্যে সরকারি কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করতে পারে।
তবে বিটিআরসির মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো দেশের ইন্টারনেট ব্যবস্থা কিংবা নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটের প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির কনটেন্ট, পোস্ট বা তথ্য সরিয়ে ফেলার জন্যে তাদের সেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কাছে আবেদন জানাতে হয়।
সাধারণত সরকারি সংস্থাগুলো কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতি, যেমন আইনি কারণে, জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনো উদ্বেগ তৈরি হলে কিংবা স্থানীয় আইন ও নীতিমালা অনুসারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু বা ডেটা অপসারণের জন্যে অনুরোধ করতে পারে।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৮৪ শতাংশের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রয়েছে, প্রতিদিন হাজার হাজার বিভ্রান্তিকর বিষয়বস্তুুর প্রচার হচ্ছে এর মাধ্যমে। এটি এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করে যেখানে জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশের কাছে তারা যে তথ্যের মুখোমুখি হয় তার নির্ভুলতা স্বাধীনভাবে যাচাই করার কোনো উপায় নেই। ভুল তথ্যের ব্যাপক বিস্তার একটি বড় সামাজিক চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। ভুল তথ্যের প্রভাবে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অনেক উদাহরণ রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয়তা এবং প্রবেশগম্যতা বৃদ্ধির সাথে সাথে ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করা আরও জটিল হয়ে ওঠে, যা জাতির স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি।
বাংলাদেশে মানবাধিকারের মূল ভিত্তি, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ভুল তথ্যের ব্যাপকতার কারণে হুমকির মুখে। স্থানীয় পর্যায়ে ভুল তথ্য প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার, বিশেষ করে যুবকদের সাথে কাজ করার জন্য উদ্যোগের প্রয়োজন। যুব ও যুব-নেতৃত্বাধীন সংগঠনগুলির অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ প্রক্রিয়া চিহ্নিতকরণ এবং কার্যকরভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদ্দেশ্য হল যুবসমাজকে ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে এবং স্থানীয় এবং জাতীয়ভাবে এই চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করার জন্য প্রক্রিয়াগুলিকে শক্তিশালী করতে অবদান রাখা।
ভুল তথ্য এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়; এগুলো বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকতার বিশ্বাসযোগ্যতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। বাংলাদেশে, ফেসবুক এবং মেসেঞ্জারের মতো প্ল্যাটফর্মগুলি ভুল তথ্য ছড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, প্রায়শই এগুলো ভাইরাল হয়ে যায়। এই বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের জন্য ভুল তথ্যের মোকাবেলা করতে এবং বিস্তৃত পরিসরে তথ্য প্রচারের বস্তুনিষ্ঠ মান বজায় রাখার জন্য সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
ভুল তথ্যের জাল উন্মোচন করার জন্য নিয়োজিত বিভিন্ন কৌশল বোঝার সাথে জড়িত, যার মধ্যে রয়েছে মিথ্যা সংযোগ, বিভ্রান্তিকর বিষয়বস্তু এবং প্রতারণার সামগ্রী তৈরি করা। বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত ল্যান্ডস্কেপ, ৩১.৫ শতাংশ ইন্টারনেট প্রবেশের হার এবং ১৮৮ মিলিয়ন মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী, স্মার্টফোন ব্যবহারের ব্যাপকতাও অনেক। তথ্যের ক্ষতিকারক পরিণতি রোধ করতে তথ্যের এই প্রবাহকে পরিচালনা করাই চ্যালেঞ্জ। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে যাচাইকরণের চ্যালেঞ্জগুলি এই সত্য থেকে উদ্ভূত যে কেউ একটি সংবাদের উৎস হতে পারে, যা যাচাইকরণ প্রক্রিয়াকে আরো জটিল করে তোলে।
শুধু টুইটার নয়, মেটার মতো অন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর কাছেও এ ধরনের বিদ্বেষমূলক বক্তব্য উদ্বেগের বিষয় নয়। বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের বিরোধিতা করেন এমন অনেকের দাবি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নীতির বিষয়ে অঙ্গীকার আর তা বাস্তবায়নে পার্থক্য আছে।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা জানান, অনেক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মেটা ২০২০ সালে নজরদারি পর্ষদের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেয়। এই পর্ষদের কার্যকারিতা দেখতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। অনলাইনে জাতিগত বিদ্বেষের প্ররোচনাকে মোকাবেলা করার জন্য তাদের প্রক্রিয়া পর্যালোচনা এবং সংশোধন করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সর্বোচ্চ পর্যায়ে অব্যাহত প্রতিশ্রæতি প্রয়োজন। বিবৃতি দেওয়া জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আফ্রিকার বংশোদ্ভূত জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রæপ, ব্যবসা, আন্তঃদেশীয় করপোরেশন ও মানবাধিকারবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রæপের সভাপতি ও সদস্যরাও রয়েছেন।
এটি এখন বাস্তবতা যে আমাদের দেশেও, সমকালীন বিশ্বের মত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অতিমাত্রায় জনপ্রিয়তা পেয়েছে। একদিকে এর অত্যধিক ব্যবহারিক গুরুত্ব, অন্যদিকে অপব্যবহারের মাত্রা বিভ্রান্তির বেড়াজালে পুরো সমাজে নির্মাণ করছে কদর্য-সংশয়-আশঙ্কার অনাকাক্সিক্ষত প্রাচীর। অপসংস্কৃতির মোড়কে রাজনীতি-ধর্ম-অর্থনীতি-সামগ্রিক সামাজিক বিষয়গুলোর মিথ্যা ভিত্তিহীন প্রচারণা, সাম্প্রদায়িকতা, কূপমЂকতা, অসহিষ্ণুতা, সহিংসতা, বিরোধ, বিচ্ছেদ জীবনপ্রবাহের সাবলীল গতিময়তায় প্রচÐ অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
কতিপয় ব্যক্তিত্বের পরিচয়ে নানামুখী নেতিবাচক বক্তব্য পরিবেশন অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করছে। এতে সামাজিক অসংগতি গণমানুষের জীবনে অসহনীয় দুর্ভোগ দীর্ঘায়িত করছে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির আচ্ছাদনে দুরভিসন্ধিমূলক তরুণসমাজের সৃজন-মনন-মানবিক-নৈতিক চরিত্রের বিচ্যুতি ভবিষ্যৎ স্বাভাবিক সমাজ বিনির্মাণে কতটুকু ভূমিকা রাখবে, তার গভীর বিশ্লেষণ অতীব জরুরি।
সমৃদ্ধ পাঠ্যপুস্তক-বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিমানসের জীবনচরিত জ্ঞান ও যুক্তিনির্ভর পঠনপাঠন থেকে দূরে সরিয়ে সামাজিক যোগাযোগনির্ভরতা যে ভয়াবহ বাস্তবতার ভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করছে, তা অনুধাবনে ব্যর্থ হলে সুন্দর ধরিত্রী কঠিন অন্ধকারের অতল গহ্বরে নিপতিত হবে-এ সম্পর্কে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।
২০১০ সালে বুকার পুরস্কার বিজয়ী খ্যাতিমান ব্রিটিশ লেখক হাওয়ার্ড জ্যাকবসন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ২০ বছরের মধ্যে শিশুদের মূর্খ বানাবে ফেসবুক-টুইটার। ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আধিপত্যের কারণে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিশুরা অশিক্ষিত হবে। স্মার্টফোনের ব্যবহার এবং প্রচুর পরিমাণে ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নাটকীয়ভাবে তরুণ প্রজন্মের যোগাযোগের পদ্ধতি বদলে যাচ্ছে। আর এসবের কারণে তারা হারাচ্ছে বই পড়ার অভ্যাসও।’ অপরাধবিজ্ঞানী-বিশেষজ্ঞদের মতে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইদানীং আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে।
এ মাধ্যম আমাদের মানবিক গুণাবলিকে প্রভাবিত করছে। মানি লন্ডারিং, আক্রমণাত্মক গেম, ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে অনেকে।
হীরেন পণ্ডিত: প্রাবন্ধিক ও গবেষক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *