চতুর্থ বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ: প্রয়োজন রিস্কিলিং ও আপস্কিলিং


হীরেন পণ্ডিত: আমাদের দেশে দক্ষ প্রোগ্রামারের অনেক অভাব রয়েছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কারণে প্রযুক্তিখাতসহ সবক্ষেত্রেই খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। নতুন প্রযুক্তি আরো নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আসছে। বিভিন্ন প্রযুক্তির সংমিশ্রণ অর্থনীতি, সমাজ, ব্যবসা এবং ব্যক্তিগত জীবনে পরিবর্তন আনছে। যন্ত্রগুলি একে অপরের সাথে কথা বলছে, পরিস্থিতি কী তা জানছে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে।
আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বে আরও দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন হবে। যারা বিদেশে যান তাদের কারিগরি বিষয়ে পারদর্শী হতে হয়। আর এ কারণেই কারিগরি শিক্ষার গুরুত্বের সঙ্গে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। সরকার যেসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দিচ্ছে তাদের সহায়তা করছে। দেশ গড়ার জন্য দক্ষ জনশক্তি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটাই আমরা সব সময় ভাবি এবং আমরা দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে কাজ করছি। সরকার এমনভাবে জনশক্তি তৈরি করছে যাতে তারা প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বেও যেকোনো জায়গায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারে।
বিশ্বে এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ব্যাপক নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। প্রথম শিল্প বিপ্লব শুরু হয় রেল রাস্তা, বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কার ও উৎপাদনে যন্ত্রের ব্যবহার এ বিপ্লবের বৈশিষ্ট্য ছিলো। দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লব শুরু হয় বিদ্যুৎ উৎপাদন দিয়ে। তৃতীয় শিল্প বিপ্লব যাকে কম্পিউটার বা ডিজিটাল বিপ্লবও বলা যায়। ক্ষুদ্র ও শক্তিশালী সেন্সর, মোবাইল ইন্টারনেট, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও মেশিন লার্নিং চতুর্থ বিপ্লবের মূল শক্তি। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের গুণগত পার্থক্য আছে, এ বিপ্লবে মেশিনকে বুদ্ধিমান করা হয়েছে। অন্য বিপ্লবে যন্ত্রকে ব্যবহার করেছে মানুষ আর এ বিপ্লবে যন্ত্র নিজেই নিজেকে চালানোর সক্ষমতা অর্জন করছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে যন্ত্রকে বুদ্ধিমান করা হচ্ছে। মানুষের মস্তিষ্কের চেয়ে যন্ত্রের ধারণক্ষমতা অনেক বেশি এবং প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা অনেক দ্রæত। ইন্টারনেটের কারণে এর কার্যক্রমের আওতা অনেক বিস্তৃতি লাভ করেছে। বাংলাদেশে বসে একটি বুদ্ধিমান কম্পিউটার যে কোন দেশের একটা যন্ত্রকে আদেশ দিতে পারে, একটা ঘরের তাপমাত্রা মেপে আদেশ দিতে পারে তাপমাত্রা বাড়ানো বা কমানোর।
তবে যেসব সেবায় মানবিক ছোঁয়া আছে সেসব সেবা দিতে মানুষের প্রয়োজন ফুরাবে না। অন্যদিকে মেধাভিত্তিক পেশার প্রয়োজন বাড়বে যেমন প্রোগ্রামার, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, আইওটি ইত্যাদিতে দক্ষ লোকের চাহিদা বাড়ছে। আমাদেও দেশে দক্ষ প্রোগ্রামের অনেক অভাব।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে প্রযুক্তির পরিবর্তন ঘটছে খুব দ্রæতগতিতে। নতুন প্রযুক্তি বয়ে আনছে আরো নতুন প্রযুক্তি। বিভিন্ন প্রযুক্তিকে সংযুক্ত করে পরিবর্তন আনছে অর্থনীতি, সমাজ, ব্যবসা ও ব্যক্তিজীবনে। যন্ত্রগুলো পরস্পর কথা বলবে, জানবে পরিস্থিতি কী, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। মানুষ সরলরেখায় চিন্তা করতে অভ্যস্ত।
আজকাল শরীরে পরিধেয় বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি আবিষ্কৃত হয়েছে, যা শরীরের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত উপাত্ত সংগ্রহ করে; যেমন তাপমাত্রা, রক্তচাপ, পালস, রক্তে শর্করা ইত্যাদি। এ উপাত্তগুলো কম্পিউটার ডাটাবেজে সংরক্ষণ করা হয়, যাতে ভবিষ্যতে ওই ব্যক্তির চিকিৎসায় ব্যবহার করা যায়।
গুগল গøাস সীমিত আকারে কম্পিউটারের মনিটরের কাজ করছে। উন্নত বিশ্বে ডাক্তারদেও রোগীর সঙ্গে কথোপকথন লিপিবদ্ধ করার আইনগত বাধ্যবাধকতা আছে। ডাক্তাররা নিজে সেই কথোপকথন কম্পিউটারে লিখতেন। অগমেডিক্স নামীয় সিলিকন ভ্যালির একটি প্রতিষ্ঠান গুগল গøাসের মাধ্যমে ডাক্তারের সঙ্গে রোগীর কথোপকথন বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকাসহ বিভিন্ন দেশে ইন্টারনেটে পাঠিয়ে দেয়; যা এখানে বসে ইংরেজি জানা কোনো যুবক বা যুবতী লিপিবদ্ধ করছেন। এই চশমা ধীরে ধীরে মনিটরের স্থান দখল করে নিচ্ছে।
থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের মাধ্যমে প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়াম, সিরামিক, স্টিল ইত্যাদি তৈরি করা যাচ্ছে। একটা কারখানার কাজ এখন একটা প্রিন্টিং মেশিনে তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। আমদানিনির্ভর বাংলাদেশের পোশাক শিল্প থ্রিডি প্রিন্টারে অনেক জিনিস নিজেরা তৈরি করতে পারবে, এতে পরিবহন ব্যয় কমে যাবে, যা পরিবেশ দূষণ কমাবে।
পোশাকে আজকাল যন্ত্রপাতিতে চিপস ব্যবহার করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয় ফলে শরীরের স্বাস্থ্যবিষয়ক বার্তা পাওয়া যায়। মানুষও পোশাকে ঘষা দিয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য পাঠাতে বা পেতে পারে। কম্পিউটারের প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা বাড়ছে আর দাম কমছে। বিভিন্ন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিতে সেন্সর বা চিপস ব্যবহার করা হচ্ছে এবং এগুলো নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে মানুষের কাছে বার্তা পাঠানো যায় এটা ইন্টারনেট অব থিংস বা আইওটি।
উন্নত বিশ্বে আইওটি নিয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আপনার গাড়ি, বাসার এসি, ফ্রিজ নির্দিষ্ট সময়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যাবে, ঘরে পছন্দসই তাপমাত্রা ঠিক করছে। রোবট ফ্রিজ থেকে নাশতা মাইক্রোওভেনে গরম করে রাখতে পারবে। ফ্রিজ তার ভেতরে সংরক্ষিত খাদ্যসামগ্রী স্ক্যান করে, খাদ্যাভ্যাস বিবেচনা করে, অনলাইনে ই-কমার্সে অর্ডার প্রদান করতে পারবে। এমনকি পশুর শরীরে চিপস স্থাপন করা যাচ্ছে এতে গবাদিপশুর শারীরিক অবস্থা, রোগ, প্রজননকাল ইত্যাদি আগেভাগে জেনে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে।
ডিজিটাইজেশনের কারণে এখন প্রচুর ডাটা তৈরি হচ্ছে, আপনি কোথায় যাচ্ছেন, কোথায় কতক্ষণ সময় ব্যয় করছেন, তার উপাত্ত আপনার স্মার্ট গাড়ি পাচ্ছে। আপনার ব্যাংক হিসাব, মোবাইল মানিব্যাগ, ক্রেডিট কার্ড মিলে আপনার খরচের হিসাব দিতে পারছে। আমরা দেখছি তা স্মার্টফোন, স্মার্ট টিভির কাছে উপাত্ত আছে। এসব উপাত্ত আগে সংরক্ষণ করা যেত না। এখন ক্লাউডে সংরক্ষণ করা সহজ ও স্বল্প ব্যয়ে। দ্রæত প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতার কারণে কম্পিউটার এসব ডাটা সহজে বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করছে।
ড্রাইভারবিহীন গাড়ি তুলনামূলকভাবে নিরাপদ ও দক্ষ হবে। এছাড়া এরা ট্রাফিক জ্যাম ও দূষণ কমাবে। কিন্তু ড্রাইভারের প্রয়োনীয়তা কমে যাবে। কম্পিউটারকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দেয়া হচ্ছে। পূর্ববর্তী পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে ডাটা বিশ্লেষণ করে এআই সিদ্ধান্ত নিতে পারছে। কম্পিউটারকে প্রথমে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, যেমন একটি বস্তু দেখতে কেমন। সে বস্তুর অনেক ছবি দেখানো। কম্পিউটার একটা প্যাটার্ন আন্দাজ করে নেয়। ফলে পরবর্তীতে রঙ, সাইজ, ভঙ্গিভেদে কম্পিউটার সেই বস্তুটি চিনতে পারে।
বর্তমানে কোনো লেনদেন হলে তা লেজার বা খতিয়ানে লিপিবদ্ধ থাকে। এ লেজার কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষণ করা হয়। বøক চেইনে লেজারটি ছড়িয়ে দেয়া হয় সব অংশগ্রহণকারীর মধ্যে। ফলে কেউ জালিয়াতি করতে পারবে না, কারণ সবার কাছে লেজার আছে। একেকটা লেনদেন একটা বøক তৈরি করে। সেটা আগের বøকের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে একটা চেইন তৈরি করে। বøক চেইনে শুধু আর্থিক লেনদেন নয়; চুক্তি, জমির দলিলসহ বিনিময়ের রেকর্ড থাকতে পারবে। বøকচেইন প্রবর্তিত হওয়ার ফলে মধ্যস্বত্বভোগীদের অনেক কাজ কমে যাবে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ছে।
আমাদের এজন্য কম্পিউটার প্রোগ্রামার, ডাটা অ্যানালিস্টসহ কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষতাসম্পন্ন লোকের চাহিদা বাড়ছে। আশার কথা হলো চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুযোগ ও সম্ভাবনা কাজে লাগাতে এবং এর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরামর্শে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহেমদ পলক চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি), বøকচেইন ও রোবটিকস স্ট্র্যাটেজি দ্রæত প্রণয়নের উদ্যোগ নেন এবং খসড়া প্রণয়নের পর মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে। যে ১০টি প্রযুক্তি আমাদের চারপাশের প্রায় সব কিছুতেই দ্রæত পরিবর্তন আনবে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে তুলে ধরার পর প্রধানমন্ত্রী চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের গুরুত্ব অনুধাবন করে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেন। ২০১৯ সালে এটুআই প্রোগ্রাম ও ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করার লক্ষ্যে পরিচালিত যৌথ সমীক্ষায় ছয়টি ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়। এগুলো হচ্ছে সনাতনী শিক্ষা পদ্ধতির রূপান্তর, অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্ভাবনী, গবেষণা ও উন্নয়ন বিকশিত করা, সরকারি নীতিমালা সহজ করা, প্রবাসী বাংলাদেশিদের দক্ষতা কাজে লাগানো এবং উদ্ভাবনী জাতি হিসেবে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং করা। এই সমীক্ষার আলোকে স্কুল পর্যায়ে উদ্ভাবনে সহযোগিতা, প্রোগ্রামের শেখানোসহ নানা উদ্যোগের বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রায় এক বছর আগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের এলআইসিটি প্রকল্প ১০টি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ওপর দক্ষ মানুষ তৈরির প্রশিক্ষণ শুরু করে। এসব উদ্যোগ আমাদের চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ঝুঁকিকে সম্ভাবনায় পরিণত করার জন্য আশাবাদী করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষ জনশক্তির জন্য কারিগরি শিক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করেছেন। আসন্ন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে কারিগরি শিক্ষার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার কথা উল্লেখ করছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আমাদের দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন। আর সে কারণেই আমরা কারিগরি শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বের জন্যই দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন হবে। যাঁরা বিদেশে যাবেন, তাঁদের কারিগরি বিষয়গুলোয় দক্ষ হয়ে যেতে হবে। আর সে জন্যই কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাতে পরিবর্তন করা হয়েছে। যেসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, সরকার তাদের সহায়তা করছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘একটি দেশ গঠনের জন্য দক্ষ জনশক্তি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এটা আমরা সব সময় মনে করি এবং দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার জনশক্তিকে এমনভাবে গড়ে তুলতে চায়, যাতে তারা প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের যেকোনো জায়গায় প্রতিযোগিতা করতে পারে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মুখে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন সহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের উপর জোর দিয়েছে। বাংলাদেশ আগামী পাঁচ বছরের জন্য জাতিসংঘের ই-গভর্নেন্স ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সে শীর্ষ ৫০ টি দেশে থাকার চেষ্টা করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের ৫ টি উদ্যোগ আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এগুলি হল ডিজিটাল সেন্টার, পরিষেবা উদ্ভাবন তহবিল, সহানুভূতি প্রশিক্ষণ, টিসিভি এবং এসডিজি ট্র্যাকার।
তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে, তরুণরা ছোট-বড় আইটি ফার্ম, ই-কমার্স সাইট, অ্যাপ-ভিত্তিক পরিষেবা এবং অন্যান্য সংস্থা তৈরি করছে। এছাড়া মহাকাশে বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটসহ কিছু বড় অর্জন বাংলাদেশকে বিশ্বে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
কয়েক হাজার বছরে মানব সভ্যতা এগিয়েছে অনেক। উৎকর্ষতা, অপটিমাইজেশন এবং দক্ষতা হচ্ছে এই শতকের মূল মন্ত্র। সেটার প্রয়োজনে এসে যোগ দিয়েছে ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’। মানুষের সহজাত বুদ্ধিমত্তার সাথে যান্ত্রিক বুদ্ধিমত্তার যোগসূত্র না থাকলে পরবর্তী শতকে যাওয়া দুস্কর। সবার জন্য যুতসই শিক্ষা, প্রযুক্তির সাথে মানবিক রাষ্ট্রের ধারণা, নতুন ড্রাগ ডিসকভারি, দুরারোগ্য রোগ থেকে মুক্তি, আরবান প্ল্যানিং, মাস ট্রানজিট সিস্টেম ম্যানেজমেন্ট, ড্যাসবোর্ডের সাহায্যে জাতীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা- ইত্যাদি ইত্যাদি ব্যাপারগুলো অনেকটাই যৌথ উদ্যোগ ডেটার সাহায্যে, এ মুহূর্তে। বিশেষ করে মানুষকে “এনাবল” করতে তার স্বপ্নের জায়গায় পৌঁছাতে। তার জীবদ্দশায়। প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনায় এসব কিছুই করা সম্ভব অল্প সময়ে। সেখানে আমরা পড়ে আছি অনেক পেছনে। অন্য দেশগুলো থেকে।
‘অ্যাপভিত্তিক নানা ধরনের সেবাও খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দৈনন্দিন কাজ, উৎপাদন, বিক্রি, বিপণন এমন নানা স্তরে সময়, শ্রম ও ব্যয় কমানোর জন্য এখন অনেকেই প্রযুক্তিকে বেছে নিচ্ছেন। বড় কম্পানিগুলো ইআরপি (এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং) সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। তবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তার (এসএমই) একটি বড় অংশই মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করছে।
মহামারি মোকাবেলা থেকে নানা কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) নানামুখী ব্যবহার দেখছে বিশ্ব। ‘আগামী দিনে ব্যবসার ধারণা আমূল পাল্টে দেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর নানা প্ল্যাটফর্ম। আগামী দিনগুলোয় চিকিৎসাসেবায়, অফিস-আদালতে, শিল্প-কারখানায়, সংবাদ সংস্থা বা গণমাধ্যমে, ভাষান্তর প্রক্রিয়া, টেলিফোনসেবা, বৈজ্ঞানিক গবেষণায়, হোটেল-রেস্তোরাঁ এমনকি বিপণিবিতানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্মক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্র বা রোবটের ব্যাপক ব্যবহারের আভাস দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে আমাদের রিস্কিলিং এবং আপস্কিলিং করতে হবে।
লেখক: রিসার্চ ফেলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *