হীরেন পণ্ডিত: ই-কমার্স বাংলাদেশে নতুন। এ খাতে সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি। খাতটি যেভাবে এগিয়েছে সেভাবে মনিটরিং বাড়েনি। আগামীতে এর আরও প্রবৃদ্ধি বাড়বে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেয়া হয়নি। তাই ই-কমার্স খাতে কিছুটা নৈরাজ্য ও প্রতারণার বিষয় সামনে এসছে। সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অবাক করা ব্যবসা শুরু করে। তাদের অতিরিক্ত মুনাফা ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান মানুষকে প্রলুব্ধ করেছে, মানুষ প্রতারণার শিকার হয়েছে এবং কিছুটা হলেও নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে।
এ নৈরাজ্য বন্ধে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে ঠিকই। কিন্তু সেটা হয়েছে অনেক দেরিতে। ই-কমার্সের প্রয়োজনীয়তা ও জনপ্রিয়তা যেভাবে বাড়ছে তাতে এ খাতের জন্য একটি আলাদা কর্তৃপক্ষ থাকা দরকার। এই ব্যবসা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে হচ্ছে। ফলে নিয়ন্ত্রণ, পর্যবেক্ষণও সহজ হবে। প্রত্যেকটি লেনদেন, অর্ডার মনিটরিং করতে হবে। কোথাও কোনো ব্যত্যয় হলে সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। নতুবা ই-কমার্স খাত এগোতে পারবে না। ক্রেতারা সস্তায় পণ্য পেলে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
সবকিছুতেই অনেক উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু মানের দিক দিয়ে কতটা এগোচ্ছে সেটাও দেখতে হবে। মান নিশ্চিত করতে হলে যার যার অবস্থান থেকে সততা ও সচেতনতার সাথে কাজ করতে হবে। দেশের কোম্পানি আইন, ট্রেড লাইসেন্স আইন বা আয়কর আইনে ই-কমার্স হিসেবে নিবন্ধনের সুযোগ রাখা হয়নি। বর্তমানে ই কমার্স ব্যবসা তথ্য প্রযুক্তি সেবা হিসেবে নিবন্ধিত হয়। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ই-কমার্স খাতে নিয়োজিত ৩০ থেকে ৪০% প্রতিষ্ঠান কোন ঘোষণা ছাড়াই ব্যবসা বন্ধ করে আত্মগোপন করেছে। সম্প্রতি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কয়েকজনকে গ্রেফতারের পর ই-কমার্সের প্রতারণার চিত্র আরো দৃশ্যমান হয়। ভোক্তাদের বোকা বানিয়ে মায়াজাল ও প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বাহারি বিজ্ঞাপন, অস্বাভাবিক ও আকর্ষণীয় অফার, অবিশ্বাস্য ডিসকাউন্ট, ক্যাশব্যাক ইত্যাদি প্রলোভনের মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে কোটি কোটি টাকা।
ই-কমার্স খাতে নৈরাজ্য বন্ধ করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা তৈরির মাধ্যমে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে নীতিমালা ও নির্দেশিকার পাশাপাশি আইন প্রণয়ন জরুরি। ই-কমার্স খাতে বিদ্যমান নৈরাজ্য অনুসন্ধান ও আইনী কাঠামো তৈরীর জন্য একটি কমিশন গঠন করা। জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সম্প্রতি ঘটে প্রতারণায় অভিযুক্তদের শাস্তি প্রদান ও গ্রাহকদের অর্থ ফেরতের ব্যবস্থা করা।
দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রতিযোগিতা কমিশন ও ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের বিদ্যমান আইনের আওতায় প্রতারিত গ্রাহকরা কিভাবে আইনী প্রতিকার পেতে পারেন তা জনগণকে অবহিত করা। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছেন তাদের সঠিক তালিকা ও অর্থের পরিমাণ জানার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি কমিটি গঠন করা। প্রতারণার সাথে জড়িত কাউকে ই-ক্যাব বা অন্য কোন ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্য না করা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে প্রতারণায় অভিযুক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রশাসক বসানো ও ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
ই-কমার্স শুধু বাণিজ্য নয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টিরও বড় উৎস। দেশের হাজার হাজার বেকার মানুষ ই-কমার্সের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন। করোনার মতো দুর্যোগময় সময়ে ই-কমার্স মানুষকে সেবা দিয়েছে। ই-কমার্স খাতে সবার জন্য সমান সুবিধা নিশ্চিত করা দরকার। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে এনে ই-কমার্স খাতকে আরো গতিশীল করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।