সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার

হীরেন পণ্ডিত: সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানোর স্বাধীনতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ভুল ও অপতথ্যের প্র্রজনন ক্ষেত্র হিসেবেও কেউ দেখতে চায়না। সম্প্রতি জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক ৩০জন বিশেষজ্ঞ এক যৌথ বিবৃতিতে এ কথা জানান। বিবৃতিতে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, টুইটার অধিগ্রহণের পর বর্ণবাদী শব্দের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়েছে। এর মাধ্যমে আফ্রিকার জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। এসবের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জোরালো জবাবদিহির ব্যবস্থা প্র্রয়োজন।:
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা রুটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নেটওয়ার্ক কনটেজিওয়ন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের’ প্র্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বলেন, টুইটার অধিগ্রহণের প্র্রথম দিনগুলোতে, বিশেষ করে অধিগ্রহণের প্র্রথম ১২ ঘণ্টায় ঘৃণ্য ও বর্ণবাদী একটি শব্দের ব্যবহার আগের চেয়ে প্র্রায় ৫০০ গুণ বেড়েছে। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, টুইটার ওই বিদ্বেষমূলক প্র্রচারণাকে উপহাস বলে আখ্যা দিয়ে বলেছিল, সেখানে বিদ্বেষের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু আফ্রিকান বংশোদ্ভূতদের বিরুদ্ধে যে বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে তা অত্যন্ত উদ্বেগের। আর তা মানবাধিকারকেন্দ্রিক সাড়া দেওয়ার দাবি রাখে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শুধু টুইটার নয়, মেটার মতো অন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর কাছেও এ ধরনের বিদ্বেষমূলক বক্তব্য উদ্বেগের বিষয় নয়। বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের বিরোধিতা করেন এমন অনেকের দাবি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নীতির বিষয়ে অঙ্গীকার আর তা বাস্তবায়নে পার্থক্য আছে, বিশেষ করে ফেসবুকে নির্বাচনী বিভ্রান্তি, ষড়যন্ত্রের তত্তে¡র বিষয়ে আলোচনা ও উসকানিমূলক বিজ্ঞাপন অনুমোদনের ক্ষেত্রে এটি উল্লেখযোগ্য। ‘গেøাবাল উইটনেস’ ও ‘সামঅফআস’-এর সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, মেটা নির্দিষ্ট কিছু বিজ্ঞাপন আটকাতে পারে না।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অনেক অভিযোগের পরিপ্র্রেক্ষিতে মেটা ২০২০ সালে নজরদারি পর্ষদের মতো একটি গুরুত্বপূূর্ণ ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেয়। এই পর্ষদের কার্যকারিতা দেখতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। অনলাইনে জাতিগত বিদ্বেষের প্র্ররোচনাকে মোকাবেলা করার জন্য তাদের প্র্রক্রিয়া পর্যালোচনা এবং সংশোধন করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সর্বোচ্চ পর্যায়ে অব্যাহত প্র্রতিশ্রæতি প্র্রয়োজন। বিবৃতি দেওয়া জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আফ্রিকার বংশোদ্ভূত জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ, ব্যবসা, আন্তঃদেশীয় করপোরেশন ও মানবাধিকারবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের সভাপতি ও সদস্যরাও রয়েছেন।
এটি এখন বাস্তবতা যে আমাদের দেশেও, সমকালীন বিশ্বের মত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অতিমাত্রায় জনপ্র্রিয়তা প্রেয়েছে। একদিকে এর অত্যধিক ব্যবহারিক গুরুত্ব, অন্যদিকে অপব্যবহারের মাত্রা বিভ্রান্তির বেড়াজালে পুরো সমাজে নির্মাণ করছে কদর্য-সংশয়-আশঙ্কার অনাকাঙ্ক্ষিত প্র্রাচীর। অপসংস্কৃতির মোড়কে রাজনীতি-ধর্ম-অর্থনীতি-সামগ্রিক সামাজিক বিষয়গুলোর মিথ্যা ভিত্তিহীন প্র্রচারণা, সাম্প্রদায়িকতা, কূপমন্ডুকতা, অসহিষ্ণুতা, সহিংসতা, বিরোধ, বিচ্ছেদ জীবনপ্র্রবাহের সাবলীল গতিময়তায় প্রচণ্ড অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
কতিপয় ব্যক্তিত্বের পরিচয়ে নানামুখী নেতিবাচক বক্তব্য পরিবেশন অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করছে। এতে সামাজিক অসংগতি গণমানুষের জীবনে অসহনীয় দুর্ভোগ দীর্ঘায়িত করছে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির আচ্ছাদনে দূরভিসন্ধিমূলক তরুণ সমাজের সৃজন-মনন-মানবিক-নৈতিক চরিত্রের বিচ্যুতি ভবিষ্যৎ স্বাভাবিক সমাজ বিনির্মাণে কতটুকু ভূমিকা রাখবে, তার গভীর বিশ্লেষণ অতীব জরুরি।
সমৃদ্ধ পাঠ্যপুস্তক-বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিমানসের জীবনচরিত জ্ঞান ও যুক্তিনির্ভর পঠনপাঠন থেকে দূরে সরিয়ে সামাজিক যোগাযোগনির্ভরতা যে ভয়াবহ বাস্তবতার ভিন্নরূপ পরিগ্রহ করছে, তা অনুধাবনে ব্যর্থ হলে সুন্দর ধরিত্রী কঠিন অন্ধকারের অতল গহ্বরে নিপতিত হবে-এ সম্পর্কে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।
২০১০ সালে বুকার পুরস্কার বিজয়ী খ্যাতিমান ব্রিটিশ লেখক হাওয়ার্ড জ্যাকবসন আশঙ্কা প্র্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘২০ বছরের মধ্যে শিশুদের মূর্খ বানাবে ফেসবুক-টুইটার’। ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আধিপত্যের কারণে ভবিষ্যৎ প্র্রজন্মের শিশুরা অশিক্ষিত হবে। স্মার্টফোনের ব্যবহার এবং প্র্রচুর পরিমাণে ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নাটকীয়ভাবে তরুণ প্র্রজন্মের যোগাযোগের পদ্ধতি বদলে যাচ্ছে। আর এসবের কারণে তারা হারাচ্ছে বই পড়ার অভ্যাসও।’ অপরাধবিজ্ঞানী-বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইদানীং আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে’।
এ মাধ্যম আমাদের মানবিক গুণাবলিকে প্র্রভাবিত করছে। মানি লন্ডারিং, আক্রমণাত্মক গেম, ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে অনেকে। মানসিকভাবে অনেকেই আছে অস্থির অবস্থায়। এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে ক্রমেই রাগ-ক্রোধ-অবসাদ-বিষণœতা-একাকিত্ব-হতাশা-হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার নিয়ে শঙ্কিত স্বয়ং ফেসবুকের সহপ্র্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মার্ক জাকারবার্গের ভাষ্যমতে, ‘সোশ্যাল মিডিয়া সময় নষ্টের জন্য নয়। এটি সত্যিকারে উপকারে আসতে পারে, যদি এর সঠিক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আপনি যদি শুধু এখানে বসে থাকেন আর যা দেখানো হবে, তাই গলাধঃকরণ করেন, তাহলে তো হবে না।’
গণমাধ্যমে প্র্রকাশিত সূত্রমতে, বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৭০ শতাংশ মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংযুক্ত, যার প্র্রায় ৯০ শতাংশই তরুণ। বর্তমানে বাংলাদেশে প্র্রচলিত ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, লিঙ্কডিন, স্কাইপে প্র্রভৃতি জনপ্র্রিয় সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সর্বাধিক জনপ্র্রিয় ফেসবুক। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৮০ শতাংশের রয়েছে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এবং এর একটি বিশাল অংশ কিশোর-কিশোরী।
বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপের ফলাফল অনুসারে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের কারণে উল্লেখযোগ্য তরুণ ও তরুণী বিপথগামী-মানসিক সমস্যায় জর্জরিত হচ্ছে-পড়াশোনায় মনোযোগ হারাচ্ছে-খেলাধুলা ছেড়ে দিয়ে রাতদিন ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। চরম স্খলন হচ্ছে শিক্ষা-নীতি নৈতিকতার। ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিচ্ছে সংঘাত-সহিংসতা। ভুয়া তথ্য সরবরাহ-ঘৃণা-বিদ্বেষ, যৌনতা ও অশ্লীলতা-চরিত্রহনন-মুদ্রা ও মানব পাচার-জুয়া-সাইবার সহিংসতাসহ নানা মাত্রিক অপরাধের মাধ্যম হিসাবে পরিগণিত হয়েছে এ সামাজিক যোগাযোগ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপরাধের ক্রমবর্ধনশীলতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আইন-চাপ প্র্রয়োগের ফলে ইউটিউব ও ফেসবুকের মতো অনেক সাইট তাদের নিজস্ব নিয়মে অগ্রহণযোগ্য ও ক্ষতিকর বিষয়বস্তু দ্রæত মুছে ফেলাসহ প্র্রথম প্র্রকাশ হওয়া প্র্রতিরোধের পদক্ষেপ নিয়েছে। ইউটিউব ও ফেসবুক কর্তৃপক্ষ নিয়মিত অনুপযুক্ত বিষয়বস্তু অপসারণের তথ্য প্র্রকাশ করছে।
গুগলের মালিকানাধীন ভিডিও শেয়ারিং সাইটের তথ্যমতে, তারা ২০২০ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৮৮ লাখ ভিডিও, ৩৩ লাখ ক্ষতিকারক চ্যানেল ও ৫১ কোটি ৭০ লাখ অগ্রহণযোগ্য মন্তব্য অপসারণ করেছে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা উল্লেখ্য সময়ে ৩ কোটি ৩০ লাখ ক্ষতিকারক বিষয় সরিয়ে নিলেও অগ্রহণযোগ্য ও ক্ষতিকর বিষয়বস্তুর আধিক্যের কারণে শুধু কোম্পানির একার পক্ষে এটি ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। নিয়ন্ত্রক কোম্পানিগুলোর শত প্রচেষ্টা সত্তে¡ও এটি দিনদিন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
চীন সাইবারস্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ওয়েবসাইট বন্ধ ও জুয়া খেলাসহ ক্ষতিকারক নানা মোবাইল অ্যাপ অপসারণ করে থাকে। দেশটিতে থাকা কয়েক হাজার সাইবার পুলিশের কাজ হচ্ছে সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফরম এবং সংবেদনশীল স্ক্রিন বার্তাগুলোকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা।
জগতের প্র্রতিটি বিষয়েরই ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় দিকই থাকে। কিন্তু যেকোনো বিষয়ের ইতিবাচক দিকগুলোকে সাদরে গ্রহণ করে সেগুলোকে আমরা কীভাবে কাজে লাগাচ্ছি সেটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আজকাল এ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে ব্যবসা-বাণিজ্যের এক বিরাট মাধ্যমের সূচনা হয়েছে। এই যান্ত্রিক কর্মব্যস্ত জীবনে অনেকের নিজের নিত্যপ্র্রয়োজনীয় নানাবিধ পণ্য কিনতে দোকান, মার্কেটে যেতে পারেন না। তাদের এই ব্যস্ত জীবনে আশার আলো হয়ে এসেছে ই-কমার্স। বিভিন্ন নামীদামী ব্যবসায়িক প্র্রতিষ্ঠান কিংবা ছোটখাট ব্যবসায়ীদের বেঁচে থাকার অবলম্বন এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যার ফলে তারা নিজেদের বিক্রয়যোগ্য পণ্যের প্র্রচার ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন। এই ই-কমার্সের সুফল ভোগ করতে বর্তমানে বহু বেকার তরুণ উদ্যোক্তা হওয়ার দিকে ঝুঁকছে। এর ফলে অনেকেই এখন অনলাইন ব্যবসামুখী হচ্ছে ও সফলতার মুখ দেখছে।
আমাদের এই সত্যটি স্বীকার করে নেওয়া জরুরি যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যথেচ্ছ ব্যবহার আমাদের বাস্তব জীবনের সম্পর্কে নেতিবাচক পরিবর্তন বয়ে আনছে ও আমাদের পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরির ক্ষেত্রে বিরাট অন্তরায় তৈরি করছে। যে কারো সাথে মনের ভাব বিনিময়ের জন্য সামনে বসে বলা সর্বোত্তম। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাত্রাতিরিক্ত আসক্তির ফলে আমরা ভার্চুয়ালি মনের ভাব আদান-প্র্রদানেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, প্র্রযুক্তির ওপর আমাদের এই নির্ভরশীলতা আমাদের প্র্রতিনিয়ত বাস্তব জীবন থেকে দূরে ঠেলে দিয়ে ক্রমেই আমাদের যান্ত্রিক করে তুলছে।
আমাদের দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অশুভ ব্যবহারের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণ আরোপে আইন প্র্রণয়ন এখন সময়ের দাবি। বিজ্ঞানের অগ্রগতি তো রুদ্ধ করার বিষয় নয়। সারা পৃথিবীই এখন ডিজিটাল যোগাযোগে নিজেদের যুক্ত রেখেছে। বিবিধ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কার্যকর রয়েছে সর্বত্র। এর সুফলও পাচ্ছি আমরা। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহারের নানা সুযোগও রয়েছে। সমস্যা হচ্ছে রেডিও-টেলিভিশনের চেয়ে গুগল, টুইটার, ফেসবুক, টিকটক বড়সংখ্যক মানুষের হাতের কাছে। কোটি কোটি মানুষের হাতে রয়েছে স্মার্টফোন। তাই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অপব্যবহারকারীরা বিভিন্ন বয়সের মানুষকে নানা রকম অপরাধের সঙ্গে যুক্ত করতে পারছে। যুক্ত করছে নানা আসক্তিতে। জঙ্গিবাদ ও বিভিন্ন নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীরা নিজেদের অপকর্মের হাতিয়ার বানাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে। নানা গুজব ছড়িয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করে তোলায় ভূমিকা রাখছে। শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চা থেকে প্র্রজন্মের মন সরিয়ে নিচ্ছে অন্ধকারের দিকে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তাদের কাছে পাঠানো আবেদনের পরিপ্র্রেক্ষিতে গড়ে মাত্র ৪৫ শতাংশ আবেদনের ক্ষেত্রে প্র্রয়োজনীয় তথ্য দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে প্র্রতারণার ব্যবসাও এখন জমজমাট হয়ে উঠছে। ফেসবুকের কিছু আইডি দেখলেই বোঝা যায় সেগুলো ফেইক (নকল), বিশেষ উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। ওই ধরনের আইডির প্র্রোফাইল পিকচার ও কভার ফটো হিসাবে ব্যবহৃত ছবিগুলো যথাযথ বলে মনে হয় না। ওসব আইডিতে যেসব বিষয় পোস্ট করা হয় তাও আপত্তিকর। তা সত্তে¡ও এ ধরনের আইডি থেকে আসা ‘ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট’ অনেক সচেতন ব্যক্তিও গ্রহণ করেন। শুদ্ধাচারী ব্যক্তিদের বন্ধুত্বের তালিকায় ফেইক আইডিধারীদের নাম দেখে অন্যরাও ওসব বন্ধুত্বের অনুরোধ গ্রহণ করেন। অনেক সচেতন মানুষও কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসব ব্যাপাওে বোধহীন হয়ে যান। আর ভুয়া আইডিধারীরা তো তা-ই চায়, অপেক্ষা করতে থাকে মাহেন্দ্রক্ষণের, সুযোগ বুঝে ভাব জমিয়ে আম-ছালা সবই লুটে নেয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উপকারিতা ও উপযোগিতা বলে শেষ করা যাবে না। প্র্রতিনিয়ত এসব মাধ্যমের নতুন নতুন ফিচার মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজ ও সাবলীল করছে। কিন্তু কারও অপরিণামদর্শী আচরণ ও ক্রিয়া-প্র্রতিক্রিয়ার কারণে বিপদ ঘটলে যত দোষ নন্দঘোষের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। আসলে যা করা উচিত তা হলো, এ মাধ্যমে বিচরণের সময় সতর্কতার বিষয়টি মাথায় রাখা। ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যতক্ষণ থাকা হবে, ততক্ষণ যেন এর মাধ্যমে ভালো কিছু করতে পারা যায়, সেই চিন্তা থাকতে হবে। এ মাধ্যমকে জ্ঞান আহরণ, পরিচ্ছন্ন বিনোদন, নির্ভেজাল ভালোবাসার মঞ্চ এবং মানুষের শুভ ইচ্ছা, সৎ চিন্তা ও মহৎ কাজগুলোকে আরও রাঙিয়ে তোলার ক্যানভাসে পরিণত করতে হবে।
হীরেন পণ্ডিত: প্রাবন্ধিক ও রিসার্চ ফেলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *